বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ন

মোরেলগঞ্জের সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়, বাড়ছে বাণিজ্যিক চাষাবাদ

শামীম আহসান মল্লিক, মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারির চাষ। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সুপারির হাট জমে উঠেছে। মোরেলগঞ্জের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আড়ৎ সৈয়দপুরে। ওখান থেকেই স্থানীয় পাইকাররা সুপারি কিনে সরবরাহ করছে উত্তরের ১৬ জেলায়। জানিয়েছেন স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীরা।

বাগেরহাটের নয় উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলায় সুপারির ফলন ভাল হয়। তার মধ্যে মোরেলগঞ্জ উপজেলা অন্যতম। তাই এ উপজেলার ছোট বড় বিভিন্ন হাটকে সামনে রেখে উপজেলার প্রায় ১ হাজার মৌসুম ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবছরে সুপারির দাম বেশি তাই বেশ খুশি স্থানীয় সুপারি চাষিরা। সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজারে সুপারির দাম ভালো থাকায় জেলার চাষিরা দিনে দিনে সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। গত ১০ বছর পূর্ব থেকে জেলার চাষিরা স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ শুরু করে। আর এ চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন সুপারি চাষ বাড়ছে।

উপজেলার কামলা বাজারের সুপারি বিক্রি করতে আসা আব্দুল লতিফ নামের এক চাষি জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। আমার ৫ বিঘা জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। দামও ভাল পাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে ২০০ পিস সুপারিতে এক কুড়ি হয়। বর্তমান বাজারে প্রতিকুড়ি সুপারি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার সন্ন্যাসী বাজারের সুপারি ক্রেতা মহারাজ মল্লিক, হালিম মল্লিক ও নজরুল ইসলাম জানান, প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে সুপারি ক্রয় করে বড় ট্রাক যোগে সুপারির বড় মোকাম সৈয়দপুরে পাঠাই। হারুন অর রশিদ নামের অপর এক ব্যবসায়ী জানান, সে ১৬/১৭ বছর যাবৎ সুপারি ক্রয় করে উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর মোকামে চালান করেন। তিনি প্রতি মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক সুপারি সৈয়দপুরে চালান করেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় জানান, পূর্ব থেকেই সুপারি উৎপাদন হতো। কিন্তু তখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ হতনা। তখন শুধু উপজেলার বিভিন্ন বসতভিটার চারপাশে, বিভিন্ন পতিত জমিতে, ঘের অথবা পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে সুপারি গাছ ছিল। এ চাষ দিন দিন বানিজ্যিক ভিত্তিতে রুপান্ত হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২.৬৮ মে. টন সুপারি উৎপাদন করা হয়। তিনি আরো বলেন, এ বছর উপজেলায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারি আবাদ করা হয় এবং এর বিপরিতে ফলন হয়েছে ৫ হাজার ৬শত মেট্রিকটন। সুপারি গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না। তবে সুপারি পাকার আগে কোনো কোনো গাছে সুপারিতে পোকা লাগে। এক প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ করে সেটি দমন করা যায়।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাফ উদ্দিন জানান, এ জেলার তিনটি উপজেলার মাটি সুপারি চাষের জন্য খুব উপযোগী। এখানে অনেক আগে থেকে প্রচুর সুপারি গাছ ছিল। সুপারি একটি লাভজনক ফল হওয়ায় জেলার অনেক চাষিরা তাদের পতিত জমিতে সুপারির বাগান করছেন। আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। দিনে দিনে এ চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com